মুক্তি - তসলিমা নাসরিন
যদি ভুলে যাবার হয়, ভুলে যাও।
দূরে বসে বসে মোবাইলে, ইমেইলে হঠাৎ হঠাৎ
জ্বালিয়ো না,
দূরে বসে বসে নীরবতার বরফ ছুড়ে ছুড়ে এভাবে
বিরক্তও করো না।
ভুলে গেলে এইটুকু অন্তত বুঝবো ভুলে গেছো,
ভুলে গেলে পা কামড়ে রাখা জুতোগুলো খুলে
একটু খালি পায়ে হাঁটবো,
ভুলে গেলে অপেক্ষার কাপড়চোপড় খুলে একটু স্নান
করবো,
ভুলে গেলে পুরোনো গানগুলো আবার বাজাবো,
ভুলে গেলে সবগুলো জানালা খুলে একটু
এলোমেলো শোবো।
রোদ বা জোৎস্না এসে শরীরময় লুকোচুরি খেলে
খেলুক, আমি না হয় ঘুমোবো,
ঘুমোবো ঘুমোবো করেও নিশ্চিন্তের একটুখানি ঘুম
ঘুমোতে পারিনা কত দীর্ঘদিন!
কেবল অপেক্ষায় গেছে। না ঘুমিয়ে গেছে।
জানালায় দাঁড়িয়ে গেছে।
কেউ আমাকে মনে রাখছে, কেউ আমাকে মনে
মনে খুব চাইছে, সমস্তটা চাইছে,
কেউ দিনে রাতে যে কোনও সময় দরজায় কড়া
নাড়বে,
সামনে তখন দাঁড়াতে হবে নিখুঁত, যেন চুল, যেন মুখ,
যেন চোখ, ঠোঁট,
যেন বুক, চিবুক এইমাত্র জন্মেছে, কোথাও ভাঙেনি,
আঁচড় লাগেনি, ধুলোবালি ছোঁয়নি।
হাসতে হবে রূপকথার রাজকন্যার মতো,
তার ক্ষিধে পায় যদি, চায়ের তৃষ্ঞা পায় যদি!
সবকিছু হাতের কাছে রাখতে হবে নিখুঁত!
ভালোবাসতে হবে নিখুঁত!
নিমগ্ন হতে হবে নিখুঁত!
ক্ষুদ্র হতে হবে নিখুঁত!
দুঃস্বপ্নকে কত কাল সুখ নামে ডেকে ডেকে
নিজেকে ভুলিয়েছি!
ভুলে যেতে হলে ভুলে যাও, বাঁচি।
যত মনে রাখবে, যত চাইবে আমাকে, যত কাছে
আসবে,
যত বলবে ভালোবাসো, তত আমি বন্দি হতে থাকবো
তোমার হৃদয়ে, তোমার জালে,
তোমার পায়ের তলায়, তোমার হাতের মুঠোয়,
তোমার দশনখে।
ভুলে যাও, মুখের রংচংগুলো ধুয়ে একটু হালকা হই,
একটুখানি আমি হই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন