রবিবার, ৫ জুলাই, ২০২০

তোমার বিষাদগুলি – পুর্ণেন্দু পত্রী

তোমার বিষাদগুলি করতলে তুলে নিতে দাও
ওষ্ঠপুটে রাখি।

ভীষণ বৃষ্টির শব্দ সারাদিন স্মৃতির ভিতরে।
একাকিনী বসে আছ বৃষ্টির ভিতরে
বালুকাবেলায়
কবেকার উইয়ে-খাওয়া ছবি।
তোমার বিষাদগুলি করতলে তুলে নিতে দাও
ওষ্ঠপুটে রাখি।

মানুষের ভীষণ বিষাদ
একদিন বেজেছে মন্দিরে শঙ্খ-ঘন্টা রবে।
মানুষের মহান বিষাদ
ভাষ্কর্যখচিত স্তম্ভে একদিন ছুঁয়েছে আকাশ।
আজ ভীষণ নীরব।

জলের ভিতরে ছুরি ঢুকে গেলে
আর্তনাদহীন।

রক্তের ভিতরে কান্না ঢুকে গেলে
প্রতিবাদহীন।

যে যার উদ্যানে ছায়াতলে
পুষ্পের ভিতরে অগ্নি জ্বলে
সুগন্ধ শোকের সম্মূখীন।
তোমার বিষাদগুলি ওষ্ঠপুটে তুলে নিতে দাও
করতলে রাখি।

আরম্ভের সব কিছু প্রতিশ্রুতিময়।
আরম্ভে সকল গাছই সুসাস্থ্য সবুজ।
আরম্ভে সকল মুখে কলমীলতার ছাঁদে সাদা আলপনা
সব কথা রাখালের বাঁশি
আরম্ভে সকল চোখ চশমা ও কাজল ছাড়া সরল হরিণ।
আরম্ভের সব কিছু প্রতিশ্রুতিময়।
অতিশয় বিচক্ষণ হতে গিয়ে যত কিছু অদল-বদল
চোখে ছানি, গালে ব্রণ, বুকে লোম
নখে রক্তপাত
লালসা ও লোভ
ডুমুর ফলের মতো গুচ্ছ গুচ্ছ এটেঁ যার দাঁতের মাড়িতে।

অতিরিক্ত লালসায় গাছ দীর্ঘ হয়।
আরও উচু হলে আরও অনেক আকাশ
এই ভেবে জিরাফের গ্রীবা ছুঁড়ে গাছ দীর্ঘ হয়।
বাতাসে হলুদ পাতা বাসী ফুল পতনে মূর্ছায়
স্তুপাকার, জলে-স্থলে শোকধ্বনিময়।

অন্যখানে আরও বেশি ভালোবাসা সোনার সিন্দুকে
এই লোভে শৈশবের রূপকথা রাজপুরী ভাঙে
ডুরে শাড়ী বদলে যায়, বিনুনীতে সাপের গড়ন
ঈর্ষার কাজল চোখে, দাঁতের হাসি ধবল করাত।

যে যতই দূরে যাক
অবশেষে সকলেরই ফিরে আসা স্মৃতির ভিতরে বৃষ্টিপাতে
অনুশোচনায় বালি ঘাঁটাঘাঁটি বালুকাবেলায়।
তোমার বিষাদগুলি করতরে তুলে নিতে দাও
ওষ্ঠপুটে রাখি।

সমস্ত আরম্ভ জুড়ে মানুষের আলুথালু কত ছোটাছুটি
কুসুম-কুড়ানো কত ভোরবেলা, কুসুমের মতন কাঁকরও
পকেটে কত কি ছবি, আয়নাভাঙা, আতশবাজীর ফুলঝুরি
দোলের আবীর, বাঁকা রেকর্ডের গান, আঁচলে কত কি
মনোহর মন্ত্রধ্বনি, পালকি যায় পাখী যেতে পারে যত দূর।

আরম্ভের সব কিছু এইরূপ প্রতিশ্রুতিময়।
ক্রমে,
ভীষণ নীরবে
প্রতিশ্রুতি, গাছ ও মানুষ
একযোগে হরিতাভ হয়।

ক্রমে, ভীষণ নীরবে
চোখের কাজল, বেণী, বিত্রিত আঁচল
সোনার সিন্দুক, সব সতকর্তা, সাফল্যের স্ফীতকায় ঘাড়
স্তম্ভ, দম্ভ, জঙ্ঘা, ঊরু, গর্ব অহংকার
সবকিছু থেকে, চেয়ানো ঘামের মত অদ্ভুত বিষাদ।
অবশেষে বৃষ্টিপাত স্মৃতির ভিতরে
বালুকাবেলায়।
তোমার বিষাদগুলি ওষ্ঠপুটে তুলে নিতে দাও
করতলে রাখি।

সভ্যতা সময় কিংবা মানুষের মহাইতিহাস
এত শোকে তবুও মরেনি।
কারণ মানুষ
এখনো নিজের করতলে
তুলে নেয় অন্যের বিষাদ।
আকাশ পাতাল থেকে এত বিষ, বারুদ ও জীবানু সত্ত্বেও
এখনো মানুষ
অন্য কিছু মহত্তম সুধার আশায়
ওপরের ওষ্ঠ থেকে তার সব মলিন বিষাদ
শুষে নিতে চায়

এখনো বিষাদ পাবে বলে
পুরুষ নারীর কাছে যায়
নারীরা নদীর কাছে যায়
নদীরা মাটির কাছে যায়
মাটি আকাশের দিকে চায়।

তোমার বিষাদগুলি করতলে তুলে নিতে চাও
ওষ্ঠপুটে রাখি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

It is a personal expression of social media. Expressions are expressed in the context.

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

আমার ব্লগ তালিকা

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

অনুসরণকারী